ভক্তি
ভক্তি (সংস্কৃত: भक्ति) হিন্দুধর্মে উপাসনার একটি বিশেষ রীতি। পূজনীয়
দেবতা বা ব্যক্তির প্রতি বিশেষ অনুরাগ বা প্রেমকেই ভক্তি বলা হয়। ঈশ্বরের
নিকট সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণের নামই ভক্তি। ভক্তির পথে যিনি ঈশ্বরোপাসনা করেন,
তাঁকে ভক্ত নামে এবং ভক্তিবাদী দর্শনকে ভক্তিমার্গ নামে অভিহিত করা হয়।
ভক্তিবাদ হিন্দুধর্মের একাধিক শাখাসম্প্রদায়ের মূলভিত্তি। বিভিন্ন
সম্প্রদায় ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ভক্তিবাদের ব্যাখ্যা প্রদান করে থাকে।
ভক্তিবাদ ঈশ্বরপ্রেমকে প্রথা ও আচার-অনুষ্ঠানের ঊর্ধ্বে স্থান দেয়। ঈশ্বর
ও মানুষের মধ্যে প্রেমিক-প্রেমিকা, বন্ধু, পিতামাতা-সন্তান, ও প্রভু-ভৃত্য
ইত্যাদি মানবিক সম্পর্ক ভক্তিবাদের প্রধান স্তম্ভ। ঈশ্বরের কোনো নির্দিষ্ট
রূপ, ঈশ্বরের নিরাকার রূপ, বা গুরুর প্রতি ভক্তি (গুরুভক্তি) ভক্তিবাদের
অঙ্গ। হিন্দুধর্মে সম্প্রদায়ভেদে ভক্তিবাদের নির্দিষ্ট রূপ প্রচলিত:
শৈবেরা শিব ও শিব-সম্পর্কিত দেবদেবীগণের ভক্ত; বৈষ্ণবেরা বিষ্ণু ও
তাঁরঅবতারগণের ভক্ত এবং শাক্তেরা মহাশক্তির বিভিন্ন রূপের ভক্ত। তবে কোনো
নির্দিষ্ট দেবতার প্রতি ভক্তি থাকলে অন্য কোনো দেবতাকে পূজা করা যাবে না –
এমন কোনো বিধান হিন্দুধর্মে নেই।
ভগবদ্গীতা প্রথম ধর্মগ্রন্থ
যেখানে "ভক্তি" শব্দটিকে প্রথম ধর্মীয় পথ অর্থে উল্লেখ করা হয়। এর
বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হয় ভাগবত পুরাণে। ভক্তি আন্দোলনের কালে দক্ষিণ
ভারত থেকে ভক্তিবাদের উত্থান ঘটে। এই ভক্তিবাদের প্রবক্তারা ছিলেন বৈষ্ণব
অলবর (খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ থেকে নবম শতাব্দী) ও শৈব নায়নার (খ্রিষ্টীয় পঞ্চম
থেকে দশম শতাব্দী) সম্প্রদায়ভুক্ত। ভক্তিবাদ ও ভক্তিবাদী সাহিত্য সমগ্র
ভারতে ছড়িয়ে দেওয়ার পিছনে এঁরাই ছিলেন প্রধান অনুপ্রেরণা। খ্রিষ্টীয়
দ্বাদশ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে ভক্তি আন্দোলন সমগ্র ভারতেই
বিস্তার লাভ করেছিল। ভারতে ভক্তিবাদের প্রভাব অন্যান্য ধর্মগুলির মধ্যেও
ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে ভক্তিবাদ ভারতীয় সমাজের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।
ধর্মীয় থেকে ধর্মনিরপেক্ষ – অনেক বিষয়েই আজ ভক্তিবাদের ছায়া সুস্পষ্ট।
No comments:
Post a Comment