Sunday, 13 September 2015

পুঠিয়া শিব মন্দির



পুঠিয়া শিব মন্দির

বাংলাদেশের রাজশাহী শহর থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার পূর্ব দিকে মন্দিরের এক শহরের নাম পুঠিয়া। রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত পুঠিয়া রাজবাড়ির বিশাল চত্বরে রয়েছে বেশ কয়েকটি নজর কাড়া প্রাচীন মন্দির। শুধু মন্দিরই নয়,আছে রাজবাড়ি,পুকুর-দিঘিসহ নানান প্রাচীন স্থাপনা।

শিব মন্দির

এটি উপমাহাদেশের সবচেয়ে বড় শিব মন্দির এ মন্দিরটি পুঠিয়া ঐতিহাসিক রাজবাড়ির প্রবেশদার সংলগ্ন বাম দিকে অবস্থিত। এ মন্দিরটি রাজা জগন্নারায়ণ এর মৃত্যুর পর তার স্ত্রী রাণী ভুবনময়ী দত্তক গ্রহনের পর তার পৃষ্ট পোষকতায় নির্মিত হয়। সুদূর থেকে কারিগর এনে এই শিব মন্দিরটি নির্মান করেন। তৎকালীন সময়ে এ মন্দিরটি নির্মান করতে খরচ লাগে প্রায় ৩ লক্ষ মুদ্রা। আর তৈরী করতে সময় লাগে ৭ বছর।


মন্দিরটি প্রথম নির্মান কাজ শুরু হয় ১২৩০ বঙ্গাব্দে এবং শেষ হয় ১২৩৭ বঙ্গাব্দে। মন্দিরটি নির্মানে ব্যবহৃত হয় ভারতের পাথর ও সুরকি। ততকালীন পুঠিয়ার রাণী ভুবনময়ী ছিল প্রবল ধর্মীয় অনুভূতি প্রবণ। নিজ ধর্মীয় আচার সিদ্ধার্থে বাড়ির সামনে শ্যাম সাগরের তীরে এ মন্দিরটি প্রতিষ্টা করেন। ব্যতিক্রমধর্মী এ মন্দিরের চর্তুরদিকে রয়েছে সুদৃশ্য বারান্দা। ভিতরে উপরে রয়েছে শিব লিঙ্গের একটি মুর্তি। চর্তুরদিকে দেয়ালে এক সঙ্গে মিশে সরু হয়ে উপরে উঠার ৩ টি সিড়ি রয়েছে। মন্দিরের মাথার উপরে পিতলের কলস বসানো রয়েছে।

তবে স্বাধীনতার যুদ্ধের পর মন্দিরের ভিতর থাকা অনেক কিছু লুটেরা লুট করে নিয়ে যায়। মন্দিরের উপরে দেওয়ালে নানান ধরনের নিপুন কারু কার্য মুর্তি লক্ষ করা যায় তা অনেকটা সে সময় ভেঙ্গে ফেলেছে আর এখনো ভাঙ্গা অবস্থায় রয়েছে। তবে সুদৃশ্য শিব মন্দিরটি বর্তমানে প্রতœতাত্ত্ অধিদফতরের আওতায় রয়েছে। ততকালীন সময় থেকে বর্তমানেও পুঠিয়া ঐতিহাসিক শিব মন্দিরটিতে প্রতিবছর শ্রাবণ মাসে শিবের মাথায় গঙ্গা জল অর্পন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এ গঙ্গা জল অর্পন অনুষ্ঠানে দেশ-বিদেশ থেকে ধর্ম প্রাণ পুরুষ- মহিলারা গঙ্গা জল অর্পন করতে আসেন।

প্রতিদিকে ৬৫ ফুট দীর্ঘ শিব মন্দিরটি একটি উঁচু ভিতের উপরে নির্মিত এবং এর চার কোনায় চারটি আর কেন্দ্রে একটি রত্ন আছে। মন্দিরের দোতলায় একটি মাত্র কক্ষ এবং কক্ষের চারপাশে দুই স্তরে বারান্দা বিদ্যমান। মূল কক্ষের অভ্যন্তরে অধিষ্ঠিত আছে কষ্ঠি পাথরের বিশাল এক শিব লিঙ্গ। পুরো মন্দিরের দেয়াল পৌরাণিক কাহিনি চিত্র খচিত। মূল্যবান এ স্থাপনাটি দীর্ঘ দিন পড়ে ছিল অযত্ন আর অবহেলায়। তবে সুখের কথা হলো বর্তমানে এটির সংস্কারের কাজ চলছে। এশিয়ার অন্যতম বড় শিব মন্দির বলা হয় পুঠিয়ার এ মন্দিরটিকে। এর লাগোয়া পূর্ব পাশে গোল গম্বুজ আকৃতির আরেকটি ছোট মন্দির আছে।


দোলমঞ্চ

শিব মন্দির ছাড়িয়ে একটু দক্ষিণে গেলেই চোখে পড়বে চার তলা বিশিষ্ট দোলমন্দির। দোলমঞ্চের আকারে মন্দিরটি ধাপে ধাপে ওপরে উঠে গেছে। চতুর্থ তলার ওপরে আছে গম্বুজাকৃতির চূড়া। প্রত্যেক তলার চারপাশে আছে টানা বারান্দা। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দশকে পুঠিয়ার রানি হেমন্ত কুমারী দেবী এ মন্দির নির্মাণ করেন।



পুঠিয়া রাজবাড়ি

দোলমঞ্চের সামনে ঘাসে ঢাকা বিশাল মাঠ। দক্ষিণ প্রান্তে মুখোমুখি ঠায় দাঁড়িয়ে ধ্বংসের প্রহর গুনছে বিশাল একটি স্থাপনা। ইট থেকে পলেস্তরা খসে যাওয়া এ প্রাসাদটি নিজের বয়সের জানান দিবে সবাইকে। এটিই বিখ্যাত পুঠিয়া রাজবাড়ি। রানি হেমন্তকুমারী দেবী তাঁর শাশুড়ি মহারানি শরত্সুন্দরী দেবীর সম্মানার্থে ১৮৯৫ সালে নির্মাণ করেন এ রাজবাড়ি । বর্তমানে লস্করপুর ডিগ্রি কলেজের একাডেমিক ভবন হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে এ ভবনটি। ভবনের পূর্ব পাশে আছে রানি পুকুর। রাজবাড়ির সম্ভ্রান্ত মহিলাদের গোসলের জন্য রানি পুকুরের দেয়াল ঘেরা সান বাঁধানো ঘাটের অস্তিত্ব এখনো বিদ্যমান।



গোবিন্দ মন্দির

পুঠিয়া রাজবাড়ির প্রাচীরের ভেতরে পোড়ামাটির অলঙ্করণে সমৃদ্ধ একটি মন্দির। বর্গাকারে নির্মিত এ মন্দিরের প্রত্যেক পাশের দৈর্ঘ্য ১৪.৬ মিটার। কেন্দ্রীয় কক্ষ ছাড়াও মন্দিরটির চারপাশে বর্গাকার চারটি কক্ষ আছে। মন্দিরটি ২৫০ বছরের পুরোনো বলে প্রচলিত থাকলেও এর গায়ে চিত্র ফলক দেখে ধারণা করা হয় যে, এটি ঊনবিংশ শতাব্দীতে নির্মিত। এ মন্দিরের দক্ষিণ পাশে প্রাচীরের বাইরে অলঙ্করণসমৃদ্ধ ছোট আরেকটি মন্দির রয়েছে।



বড় আহ্নিক মন্দির

পুঠিয়া রাজবাড়ির পশ্চিম পাশে দিঘি। তার পশ্চিম তীরেই রয়েছে পূর্বমূখী বড় আহ্নিক মন্দির। কারুকার্য মণ্ডিত এ মন্দিরের নির্মাণশৈলী বেশ আকর্ষণীয়।


গোপাল মন্দির

বড় আহ্নিক মন্দিরের পাশে দক্ষিণমুখী অবস্থানে আছে গোপাল মন্দির। ১৬.৩০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০.৪৭ মিটার প্রস্থের এ মন্দিরটির উচ্চতা প্রায় ৮ মিটার।


No comments:

Post a Comment