Sunday, 13 September 2015

একবার গজেন্দ্র নামে একটি বৃহৎ হস্তিরাজ ...............



একবার গজেন্দ্র নামে একটি বৃহৎ হস্তিরাজ (হাতি) তার স্ত্রী, সন্তান এবং অন্যান্য স্বজাতিদের নিয়ে সরোবরে গেলেন স্নান করতে। ঠাণ্ডা ও পরিষ্কার জলে তাদের মন অত্যন্ত সতেজ হয়ে গেল এবং তাঁরা তাদের শুঁড় দিয়ে একে অন্যের গায়ে জল ছিটিয়ে খেলা করতে লাগলেন। যখন সেই পদ্মের ন্যায় সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন সরোবরে সকলে হাস্যোজ্জ্বল ছিল এবং জলকেলি করছিল, তখন একটি কুমির আকস্মিকভাবে গজেন্দ্রকে আক্রমণ করল এবং দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরল। হস্তি তার বিপুল শক্তি সহকারে বীরোচিত প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলেন, কিন্তু নিজেকে মুক্ত করতে পারলেন না। তাকে মৃতবৎ অবস্থায় দেখে তার পত্নীরা কেদে উঠলেন। অন্যান্য হস্তিরা তাকে বাঁচানোর জন্য উপর থেকে টানতে লাগলেন কিন্তু যেহেতু জলের অভ্যন্তরে কুমিরের প্রচণ্ড শক্তি, তাই তাঁরা সফল হতে পারলেন না। সেই যুদ্ধ অনেকক্ষণ চলতে লাগল। ধীরে ধীরে হস্তির শক্তি নিঃশেষ হতে লাগল।
যখন গজেন্দ্র উপলব্ধি করলেন যে , তার নিজের আত্মরক্ষার আর কোনো উপায় নেই এবং তার বন্ধু, আত্মীয় বা স্ত্রী কেউই তাকে রক্ষা করতে পারবে না, তখন গজেন্দ্র প্রাণভয়ে খুবই ভিত হলেন। গজেন্দ্র ভাবলেন, এটা নিয়তির বিধান যে, আমি এই কুমির কর্তৃক আক্রান্ত হয়েছি এবং তাই আমাকে অবশ্যই পরমেশ্বর ভগবানের কাছে আশ্রয় গ্রহণ করতে হবে, যিনি সকলের আশ্রয়দাতা, এমনকি মহাত্মাদেরও।
গজেন্দ্র অত্যন্ত কাতর স্বরে ভগবানের নিকট প্রার্থনা জানালেন এবং শীঘ্রই ভগবান নারায়ণ তার সম্মুখে আবির্ভূত হলেন। গজেন্দ্র ব্যথায় কাতর হওয়া সত্ত্বেও তার শুঁড় দিয়ে একটি পদ্মফুল নিয়ে অনেক কষ্টে ভগবানকে নিবেদন করলেন। ভগবান তৎক্ষণাৎ কুমিরসহ গজেন্দ্রকে জল থেকে উপরে তেনে তুললেন। এরপর ভগবান তার চক্র দ্বারা কুমিরের মস্তক ছিন্ন করলেন, এভাবে গজেন্দ্র রক্ষা পেল। তাই যখনই আমরা নিজেদের সমস্যায় জর্জরিত হব তখন আমাদের গজেন্দ্রের মত ভগবানের আশ্রয় গ্রহণ করা উচিত। এভাবে আমরাও পরমাশ্রয় লাভ করতে পারব। কৃষ্ণ হয়তোবা স্বয়ং আমাদের সম্মুখে আবির্ভূত হবেন না, কিন্তু তিনি অবশ্যই আমাদের সাহায্য করবেন।

No comments:

Post a Comment